২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

মানব মস্তিষ্কে নিউরালিংক চিপ

মানব মস্তিষ্কে নিউরালিংক চিপ -


২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) নিউরালিংককে প্রথমবারের মতো মানুষের মস্তিষ্কে চিপ বসিয়ে পরীক্ষা চালানোর অনুমতি দেয়, যা পক্ষাঘাতগ্রস্ত এবং বিভিন্ন স্নায়বিক সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের সাহায্য করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। নিউরালিংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে ব্রেনে বসানো চিপের সাহায্যে মানুষ যাতে তাদের কম্পিউটারের কার্সর ও মাউস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। অর্থাৎ, মনে মনে ভেবেই কম্পিউটারে কাজ করা যাবে। অন্তত মাউস ও কিবোর্ড পরিচালনার অংশটুকু।
ইলন মাস্কের কোম্পানি নিউরালিংক জানিয়েছে, প্রথমবারের মতো সফলভাবে ওয়্যারলেস ইেন চিপ মানুষের মস্তিষ্কে প্রতিস্থাপন করেছে তারা। চলতি বছরে প্রথমবারের মতো মানব মস্তিষ্কে নিউরালিংকের চিপ বসানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইলন মাস্ক। যার মস্তিষ্কে চিপটি বসানো হয়েছে, তিনি ইতোমধ্যেই ব্রেনের মাধ্যমে কম্পিউটার পরিচালনা করতে পারছেন। মাস্ক জানান, প্রাথমিক ফলাফলে নিউরন স্পাইক শনাক্তকরণ ব্যবস্থায় আশাব্যঞ্জক সাড়া মিলেছে।

ইলন মাস্ক জানিয়েছেন, এরই মধ্যে সফলতা পাওয়া গেছে। অগ্রগতি ভালো, এবং রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছে বলে মনে হচ্ছে। আমাদের জানামতে তার উপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব নেই। রোগী কেবল চিন্তা করেই মাউস নিয়ন্ত্রণে সক্ষম। যার মস্তিষ্কে চিপটি বসানো হয়েছে, তিনি মাউসে কতগুলো ক্লিক করতে পারেন, তা এখন পর্যবেক্ষণ করে দেখছে নিউরালিংক কর্মকর্তারা। নিউরালিংকের আগে আরো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মস্তিষ্কের তরঙ্গ শনাক্ত করতে সক্ষম যন্ত্র মানুষের মস্তিষ্কের সাথে যুক্ত করেছে।
ইলন মাস্কের তথ্য মতে, মানুষের মস্তিষ্ককে কম্পিউটারের সাথে যুক্ত করে জটিল স্নায়বিক সমস্যার সমাধান করাই নিউরালিংকের লক্ষ্য। আর তাই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়াতে অক্ষম ব্যক্তিরা শুরুতে চিপটি ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। তবে কবে নাগাদ চিপটি বাণিজ্যিকভাবে উন্মুক্ত করা হবে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানাননি ইলন মাস্ক।

নিউরালিংক ছয় বছরের একটি গবেষণা শুরু করার অনুমোদন পেয়েছে যেখানে একটি রোবট অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মস্তিষ্কের একটি অংশে মানুষের চুলের থেকেও সূক্ষ্ম ৬৪টি পাতলা সুতা (থ্রেড) প্রবেশ করাবে। ওয়্যারলেস চার্জযোগ্য ব্যাটারিতে চালিত এই থ্রেডগুলো মস্তিষ্কের ইমপ্ল্যান্টে পরীক্ষামূলক সঙ্কেত রেকর্ড করতে এবং পাঠাতে পারে। ইমপ্ল্যান্ট থেকে প্রাপ্ত সঙ্কেতগুলো পরে একটি সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশনে যায় এবং তা নির্ণয় করে একজন মানুষ কীভাবে চলাচল করে।
সহজ কথায় নিউরালিংক একটি মস্তিষ্কের ইমপ্ল্যান্ট এবং একটি সংযুক্ত অ্যাপের মাধ্যমে মানুষের চলাচলের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করার জন্য একটি সিস্টেম তৈরি করছে।
ইলন মাস্ক ঘোষণা দিয়েছেন, নিউরালিংকের প্রথম পণ্যটির নাম হবে ‘টেলিপ্যাথি’। এই প্রযুক্তির লক্ষ্য, ব্যবহারকারীদের তাদের চিন্তাভাবনার মাধ্যমে ফোন বা কম্পিউটারের মতো ডিভাইসগুলো নিয়ন্ত্রণ করার অনুমতি দেয়া। মূলত মাস্ক এমন একটি ভবিষ্যতের কল্পনা করেছেন, যেখানে স্টিফেন হকিংয়ের মোটর নিউরন রোগের মতো ব্যক্তিরা টাইপিংয়ের মতো প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে আরো দ্রুত যাতে যোগাযোগ করতে পারেন।

নিউরালিংক যেভাবে কাজ করে
২০১৬ সালে প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক নিউরালিংক প্রতিষ্ঠা করেন। এর মাধ্যমে মানুষের মস্তিষ্ককে কম্পিউটারের সাথে যুক্ত করে দৃষ্টিশক্তি, বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা, বিষণ্ণতা, সিজোফ্রেনিয়া, স্থূলতা ও শরীরিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। নিউরালিংকের চিপগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে এগুলো মস্তিষ্কের সঙ্কেতগুলোকে যথাযথভাবে বুঝে ব্লুটুথের মাধ্যমে সংযুক্ত ডিভাইসে পাঠাতে পারে। বানরের মস্তিস্কে পরীক্ষা চালানোর সময় এই প্রক্রিয়া সফলভাবে কাজ করেছিল। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই চিপসগুলো জনপরিসরে চালু করার আগে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে, যাতে এগুলোতে কোনো ত্রুটি বা দুর্বলতা না থাকে। মস্তিষ্কে এই চিপ স্থাপন করা হলে তা মানুষের শরীর ও জীবনের ওপর কেমন ঝুঁকি তৈরি হয়, তা নিয়ে অবশ্য দীর্ঘ দিন ধরেই উদ্বেগ রয়েছে। তবে এফডিএ এখন মানব মস্তিষ্কে এই চিপের পরীক্ষামূলক ব্যবহার অনুমোদন করায় উদ্বেগ অনেকখানি কমবে। তবে দীর্ঘদিন ধরেই নিউরালিংক এই চিপ নিয়ে নানা রকম যাচাই-বাছাই ও গবেষণা অব্যাহত রেখেছে।


আরো সংবাদ



premium cement